ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

সোডিয়াম সালফেট আমদানিতে সংকটে লবণচাষিরা

♦ সরকার দাবি না মানলে মাঠে নামার হুমকি চাষি ও ব্যবসায়ীদের
♦ লবণ প্রতি কেজি উৎপাদনে খরচ ৬ টাকা, অর্ধেক টাকাও ওঠাতে পারছেন না কৃষক
ছোটন কান্তি নাথ, (কক্সবাজার) চকরিয়া :: দেশে উৎপাদিত লবণ ভোক্তা চাহিদা মিটিয়ে শিল্প খাতেও ব্যবহার হয়ে আসছিল যুগ যুগ ধরে। এতে চাষি, ব্যবসায়ীসহ লবণ শিল্প সংশ্লিষ্টরা লাভবান হন। কিন্তু এ খাতকে সংকটে ফেলে দিয়েছে বিপুল আমদানি। বড় বড় মিল মালিকরা বিদেশ থেকে কেমিক্যাল আইটেমের নামে গোপনে ‘সোডিয়াম সালফেট’ আমদানি অব্যাহত রাখায় পথে বসেছেন দেশের চাষিরা। এতে মাঠ পর্যায়ে এক কেজি লবণ উৎপাদনে ছয় টাকা খরচের বিপরীতে সাড়ে তিন টাকাও পাচ্ছেন না চাষিরা। এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে গতকাল বুধবার চকরিয়ার একটি হোটেলে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী নেতারা জরুরি সভা করেন। সভায় লবণের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে গঠন করা হয় লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ।

সংগ্রাম পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ চৌধুরীসহ নেতারা জানান, দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে দেশের বড় বড় পোশাক কারখানা মালিকরা প্রতি সপ্তাহে ট্রাকে ট্রাকে করে লবণ কিনে নিয়ে যেতেন কক্সবাজার থেকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেশে উৎপাদিত লবণ না কিনে লাখ লাখ মেট্রিক টন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট (শিল্প লবণ) আমদানি করা হচ্ছে। আবার সেই লবণ প্রক্রিয়াজাত করে ভোজ্য লবণ হিসেবেও বাজারজাত করছেন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশীয় লবণশিল্পে। এ কারণে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ছয় উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন।

নেতাদের দাবি সরকার যেন দেশীয় লবণশিল্প রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং লবণ আমদানির অনুমতি না দেয়। তাঁরা বলেন, অচিরেই এমন আশ্বাস না পেলে লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন। এ জন্য আগামী ২৭ মার্চ ফের সভা আহ্বান করা হয়েছে।

বিসিকের তথ্য মতে, কক্সবাজারের ছয় এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার অন্তত ৭০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে দেশে ভোক্তা এবং শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য লবণের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯.৫০ লাখ মেট্রিক টন। এই চাহিদা মিটিয়ে লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। তা ছাড়া গত মৌসুমে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন লবণ ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখনো বিক্রি হয়নি। এর পরেও প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন শিল্প লবণ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।

লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি অন্য শিল্পের প্রয়োজনে আনতে হয় তবে তার ওপর ২০০ শতাংশ করারোপ করতে হবে। সোডিয়াম সালফেটের নামে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কক্সবাজারেই স্থাপন করতে হবে ‘লবণ বোর্ড’-এর অফিস। আর মাঠ থেকে ন্যায্যমূল্যে অন্তত দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ ক্রয় করে সরকারিভাবে আপৎকালীন মজুদ গড়ে তুলতে হবে।

সভায় লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া ও জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, কার্গো বোট মালিক সমিতির সভাপতি মকছুদ আহমদ প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: